দ্বৈত নাগরিকত্ব:
স্বাধীন ভারতের বহু নাগরিক যারা নিজেদের কর্ম কৃতিত্বে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের বিভিন্ন সময়ে তাদের নিজেদের দেশের সাম্মানিক নাগরিকত্ব প্রদান করছে বহু বিদেশী রাষ্ট্র। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিট ভারতীয় নাগরিকদের এই সম্মান পাওয়া ভারতের কাছে গৌরব।
তাই, কোনো ভারতীয় নাগরিক যে কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে তার ভারতীয় নাগরিকত্বের অবসান ঘটবে – ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনের ধারাটি এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশেষত ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলি থেকে বহু মানুষ জীবিকার সন্ধানে বিদেশে বিশেষত ইউরোপ ও আমেরিকার পাড়ি দেন। এরা এবং এদের ছেলে মেয়েরা সংশ্লিট বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিক হাওয়া সত্বেও নিজের জন্মভূমির প্রতি অনুরক্ত থাকেন।
দেশীয় বংশোদ্ভূতরা চেষ্টা করেন দেশের উপকারে আসতে, দেশের আর্থিক উন্নয়নে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে। এই ভূমিকা পালনের সুযোগ বিপুল পরিমানে বৃদ্ধি পায় বিশ্বাযনোওর বিশ্বে। ভারতবর্ষও এর ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বাযনোওর ভারতের আর্থিক উন্নয়নে প্রবাসী ভারতীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থেকেন। তাদের এই ভূমিকাকে সন্মান জানাতে এবং এই কাজে তাদের আরও উৎসাহ জানাতে গত কয়েক বছর ধরে প্রবাসী ভারতীয় সম্মেলনের আয়োজন করে প্রত্যেক বছর ৯-১০ জানুয়ারী এই দুই দিন। সম্মেলনের সময় বিশেষ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে কৃতি ” এন আর আই ” দের। বার বার বলা হয়েছে ভারতের আর্থিক উন্নয়নে তাদের সহায়তার কথা।
কয়েক বছর আগে, প্রবাসী ভারতীয় সম্মেলনে, এন আর আই দের জন্য বিশেষ ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। এই নাগরিকত্বের প্রকৃতি নিঃসন্দেহে এমন হওয়াই বাঞ্চনীয় যাতে এই ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণের সাথে বর্তমানে তারা যেখানে প্রবাসে সুপ্রতিষ্ঠিত সেই দেশের ত্যাগের পূর্বশর্ত না থাকে। কিন্তু ভারতীয় সংবিধান অনুসারে রচিত ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী বিদেশী কোন রাষ্ট্রের নাগরিক সেই দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ না করলে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করা যায় না। তাই একক নাগরিকত্ব আইনের এই দেশে বিশেষ দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রদানের প্রশাসনিক প্রয়াসকে সফল করার জন্য আবশ্যিক ছিল ভারতীয় সংবিধানের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত অংশের সংশোধন।
২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতীয় সংসদে পাশ হয় ” ভারতীয় সংবিধানের নাগরিকত্ব সংশোধন আইন “। এই আইনে মোট ১৬ টি দেশে বসবাসকারী প্রবাসী ভারতীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিকদের বৈধতা প্রদান করা হয়।
এই ১৬টি দেশ হল:
১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
২. গ্রেট ব্রিটেন
৩. কানাডা
৪. নেদারল্যান্ডস
৫. ইতালি
৬. আয়ারল্যান্ড
৭. পর্তুগাল
৮. সুইজারল্যান্ড
৯. গ্রিস
১০. সাইপ্রাস
১১. অস্ট্রেলিয়া
১২. নিউজিল্যান্ড
১৩. ফ্রান্স
১৪. সুইডেন
১৫. ফিনল্যান্ড
১৬. ইসরাইল
তবে এই দ্বৈত নাগরিকত্বের দ্বারা যে ” ওভারসিজ ইন্ডিয়ান সিটিজেনশিপ ” প্রধান করা হচ্ছে। এই সিটিজেনশিপ পাবেন তারা ভারতের ভোটাধিকার, নির্বাচনের অংশগ্রহনের সুযোগ ও সাংবিধানিক পদে আসীন হবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। কিন্তু ভারতে এসে চাকরি পাওয়া বা চাকরি করা এবং সম্পত্তি কেনার জন্য আগের মতো বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হবে না।
দ্বৈত নাগরিকত্ব ও দ্বি-নাগরিকত্বের পার্থক্য:
ভারতীয় শাসনতন্ত্রের কাঠামোয় একটি যুক্ত রাষ্ট্রীয় ধাঁচ আছে, কিন্তু মার্কিন যুক্ত্ররাষ্ট্রের মতো প্রকৃত অর্থে যুক্তরাষ্ট্র নয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যাবস্থার বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য ভারতে বিদ্যমান। ভারতকে বলা হয় ” আধা-যুক্তরাষ্ট্রীয় রাষ্ট্র “।
মার্কিন যুক্ত্ররাষ্ট্র দ্বি -নাগরিকত্ব প্রধান করা হয়। দুটি নাগরিকত্বের একটি প্রদান করে কেন্দ্র অপরটি সংশ্লিষ্ট রাজ্য। কিন্তু ভারতের নাগরিকরা এক-নাগরিকত্ব উপভোগ করেন।
এই পোস্টটি লেখার জন্য কিছু বই এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে। পোস্টটিতে কোনো রকম ভুল থাকলে অথবা আপনার কোনো মতামত থাকলে আমাদের সাথে [email protected] যোগাযোগ করুন।
আশা করি এই পোস্টটি ভালো লেগেছে। পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট এ জানাবেন এবং সবার সাথে শেয়ার করবেন।